363722

সৌদিতে নিহত দুই বাংলাদেশির পরিবার পাচ্ছে ৩০ কোটি টাকা 

প্রবাস থেকে: সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর মধ্যস্থতায় দেশটিতে নিহত দুই বাংলাদেশি পরিবারের অনুকূলে ক্ষতিপূরণের প্রায় ৩০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।

২০০৬ সালে দাম্মামে নিহত সাগর পাটোয়ারীর পরিবারকে ৫১ লাখ সৌদি রিয়াল (১৪ কোটি ৯১ লাখ ৮৯ হাজার ৬০৮ টাকা) এবং ২০১৯ সালে রিয়াদে নিহত মোসা. আবিরণ বেগমের পরিবারকে ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল (১৪ কোটি ২৭ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৮ টাকা) ক্ষতিপূরণ বাবদ বিতরণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার সাগর পাটোয়ারী ২০০৬ সালের ২৭ জুন বন্দুকধারীর গুলিতে দাম্মাম শহরে নিহত হন। দীর্ঘসময় আততায়ীকে শনাক্ত করতে না পারায় যথাসময়ে মামলাটির অগ্রগতি হয়নি। ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট শ্রমকল্যাণ উইং প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় পরিদর্শনকালে জানতে পারে, সেখানে একটি চুরির মামলায় সৌদি নাগরিক উমর আল শাম্মেরি আটক আছেন, যিনি সাগর পাটোয়ারি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন।

দাম্মাম পুলিশ জানায়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উমরকে বিবাদী করে মামলা করলে এই বিষয়ে পুনঃতদন্ত করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিহত সাগরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অজ্ঞাত বিভিন্ন লোকের সহযোগিতায় তার পরিবারের ফোন নম্বর সংগ্রহের মাধ্যমে দূতাবাসের অনুকূলে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে রাষ্ট্রদূতের দিক নির্দেশনায় শ্রম কল্যাণ উইংয়ের প্রতিনিধি সৌদি আদালতে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আদালত ২০২১ সালের ২৪ মার্চ উমর আল শাম্মেরির বিরুদ্ধে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করে। অভিযুক্তের বাবা অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারের আপোষ প্রস্তাব করলে রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালের আপোষ প্রস্তাবে নিহত সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশরা সম্মত হন।

আদালত অভিযুক্তের পরিবারের থেকে চেক গ্রহণ করে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন। চলতি বছরের গত ৬ ডিসেম্বর দাম্মামের সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকের ফয়সলিয়া শাখার মাধ্যমে দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা হয়।

অন্যদিকে, ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রিয়াদের আজিজিয়ার নিয়োগকর্তার বাসায় গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানির নির্যাতনে মারা যান খুলনার পাইকগাছার গৃহকর্মী মোসা. আবিরণ বেগম। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজিজিয়া পুলিশ গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানী, গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির এবং তাদের ছেলে ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেপ্তার করেন।

দীর্ঘ বিচারকাজ শেষে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের ৩ সদস্য বিশিষ্ট বিচারক বেঞ্চ প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে কেসাস (জীবনের বিনিময়ে জীবন) এবং অন্য আসামিদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল অর্থদণ্ড করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের হলে আদালতের ৫ সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চ কেসাস বা মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে রক্তপণের বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানানো হলে নিহতের পরিবার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আসামিদেরকে ক্ষমার সম্মতি প্রদান করে রাষ্ট্রদূত বরাবর আবেদন করেন। সৌদি আরবে সর্বনিম্ন রক্তপণ ৩ লাখ সৌদি রিয়াল হলেও রাষ্ট্রদূতের প্রচেষ্টায় নিহতের পরিবার ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল রক্তপণ পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা করতে সম্মত হয়।

অভিযুক্তের পরিবার আদালতের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রক্তপণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে কাউন্সিলর (শ্রম) রিয়াদের ডেপুটি গভর্নর নাবিল বিন আব্দুল্লাহ আল-তাওয়ীলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন। পরে বিচারক চলতি বছরের ১৫ মে প্রধান আসামির হত্যার রায় বাতিল করে আপোষ অনুযায়ী নিহত মোসা. আবিরণ বেগমের বৈধ ওয়ারিশদের নামে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করেন এবং সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর সেটি দূতাবাসের একাউন্টে জমা হয়।

বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সাগর পাটোয়ারী এবং আবিরণ হত্যা মামলায় সৌদি আরবে কোনো বাংলাদেশির অনুকূলে সর্বোচ্চ ব্লাডমানি আদায় হওয়াতে নিহতের পরিবার সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মরত সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

 

ad

পাঠকের মতামত